ভন্ড সাধু ( সম্পূর্ণ)

আমার ওয়েবসাইটে আসার জন্য ধন্যবাদ

the mystery

the mystery

পার্ট- ১

পিঠার মিষ্টি গন্ধে তানিয়ার ঘুম ভাঙ্গল। আড়মড়া ভেঙে ফ্রেশ হয়ে কিচেনে মায়ের কাছে গেল। সেখানে গিয়ে দেখল তার মা পিঠা তৈরি করছে। 

তানিয়াকে যেতে দেখে  মা হাসি মুখে বললেন, উঠে পড়েছ,  ঠিক আছে, যখন উঠে পড়েছ তখন আমাকে  একটু সাহায্য কর কর।

একটা গামলা এগিয়ে দিয়ে বললেন, সামান্য পরিমাণ পানি দিয়ে চালের গুঁড়ো গুলো মাখিয়ে দাও। মায়ের কথায় কান না দিয়ে তানিয়া মাকে জিজ্ঞেস করলো, এত পিঠা করছো কেন। কেউ আসবে নাকি?

 মা মুচকি হেসে জবাব দিলেন, হ্যাঁ,  আমার ছেলে আসবে।

তোমার ছেলে? তার কন্ঠে প্রশ্নের স্বর। সে তো রীতিমতো অবাক। তানিয়া বাবা-মার একমাত্র মেয়ে তার আবার ভাই আসবে  কোথা থেকে? মা জবাব দিলেন, রাজ আসছে।

রাজের কথা শুনে তানিয়া স্বস্তি পেল। চালের গুঁড়োর গামলাটা এগিয়ে নিয়ে সামান্য পানি ঢেলে চালের গুঁড়ো মাখতে মাখতে বলল, রাজ তোমার ছেলে হতে যাবে কেন সে তো তোমার ভাইয়ের ছেলে। 

– কেন, ভাইয়ের ছেলে কি আমার ছেলে হতে পারে না?

-আম্মু তুমি রাজ কে একটু বেশি ভালোবাসো।

-কি করে বুঝলে?

-কি করে বুঝলাম তুমি পাস সাত রকমের পিঠা তৈরী করেছো শুধু মাত্র ওই আসছে বলে। কই রোজ রোজ তো আমাকে এত পিঠা তৈরি করে দাও না।

-তুমি এভাবে ওকে হিংসা করো কেন বলতো? ছেলেটা প্রি-টেস্ট এর পরে এখান থেকে বেরিয়ে গেছে। কিছুদিন আগে এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এখন আবার বেড়াতে আসছে তাই ওর জন্য কয়েকটা পিঠা তৈরি করেছি।

– (তানিয়া অভিমানের কন্ঠে) এসএসসি পরীক্ষা তো আমিও দিয়েছি এতদিন তো তুমি আমাকে পিঠা তৈরি করে দাও নি?

– রাজ এলে একসাথে বানিয়ে দেবো বলেই তো এতদিন বানিয়ে ছিলাম না, আজকে তো দিচ্ছি।

১১টার সময় বাড়ির সামনে এসে একটা গাড়ি থামলো। বাড়ির দরজা খুলে তানিয়া বাইরে বেরিয়ে এল। গাড়ি থেকে নেমে এল রাজ।

গাড়ি থেকে নেমে তানিয়াকে দেখে বলল,  হাই তানিয়া, কেমন আছো?

তানিয়া মুচকি হেসে জবাব দিল, আমি ভালো আছি, তুমি ভালো আছো তো?

 হ্যাঁ আমিও ভালো আছি। এরপর গাড়ি থেকে ব্যাগ নামাতে নামাতে ড্রাইভারকে বলল, কাকু, আব্বু আম্মুকে বলে দিও আমি এখানে বেশ কিছুদিন থাকব।

গাড়ি থেকে ব্যাগ নামিয়ে নিয়ে তানিয়ার সাথে কথা বলতে বলতে বাড়ির ভেতরে চলে গেল। ড্রাইভার গাড়ী ঘুরিয়ে নিয়ে চলে গেল। বাড়ির ভেতরে এসে আন্টিকে দেখে সালাম।

আন্টি সালামের উত্তর দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ভাইয়া ভাবী কেমন আছে? তারা এলনা কেন? রাজ জবাব দিল, দুজনই ভালো আছে। আব্বু বলেছে কাজের চাপ কমলে আসবেন’। আন্টি রাজ এর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে বললেন, যাও গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে এসো আমি টেবিলে পিঠা দিচ্ছি। তুমি পিঠা খেয়ে বিশ্রাম নিও।’

রাজ আনন্দের সাথে বলল, ‘আন্টি তুমি পিঠা তৈরি করেছে? থ্যাঙ্ক ইউ আন্টি।’  কথা শেষ করে হাত মুখ ধুতে চলে গেল। তানিয়ার মা তানিয়ার হাতে ব্যাক টা দিয়ে বললেন, যাও এটা গেস্ট রুমে রেখে এসো।

খাবার টেবিলে এত পিঠা দেখে রাজ মহা খুশি। রাজ আর তানিয়া একসাথে বসে পিঠা খেল। সারা দিন তারা খুব মজা করলো। সন্ধ্যার সময় আঙ্কেল অফিস থেকে এলেন। আঙ্কেলের সাথে বসে সে রাতের খাবার খেলো। রাত ৮টার সময় আন্টি বলল এখন ঘুমোতে যাও। রাজ বলল,

– এই সন্ধ্যার সময় ঘুমোতে যাবো?

– হ্যাঁ আব্বু এই সন্ধ্যার সময়েয় ঘুমোতে যাবে।

– না আমি যাব না।

– জেদ করো না তো আব্বু। তুমি কি জানো রাতের বেলায় ভূতেরা ঘুরে বেড়ায়। আর কেউ জেগে থাকলে তার ঘাড় মটকায়। চলো ওঠ ঘুমোতে যাও’ এই বলে জোর করে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিলেন রুমে।

রাজ বিছানায় শুয়ে অনেক ঘুমানোর চেষ্টা করল কিন্তু কিছুতেই ঘুমাতে পারল না। তাই সে জানালা খুলে দিলো এবং চেয়ারটা জানালার পাশে টেনে নিয়ে বসে পড়লো। জানালা দিয়ে বাইরের ঠান্ডা বাতাস এসে তার গায়ে লাগলো, মনটা তার আনন্দে ভরে গেল। অমাবস্যার রাত চার দিকটা অন্ধকার। বাইরের প্রায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না। প্রায় তিন ঘন্টা এভাবেই কেটে গেল। হঠাৎ মানুষের কথা বলার শব্দ শুনতে পেল। সে ভালো করে লক্ষ্য করলো শব্দটা কোথায় থেকে আসছে। শব্দটা জানালার বাইরে রাস্তা থেকে আসছে।

সে ৩জন লোকের কণ্ঠস্বর শুনতে পেল। কিন্তু ওরা কি বলছে তা বুঝতে পারল না। শব্দটা ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল। এরপর ওর ঘুম পেতে শুরু করল সে জানালা বন্ধ করে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল।


পার্ট- ২

পরেরদিন রাজ, তানিয়া ও আন্টি বারান্দায় বসে গল্প করছিল। এমন সময় একদল মানুষকে সাধু বাড়ির দিকে যেতে দেখল। কিছুক্ষণ পর জমেলা আর আয়েশাকে দেখল কী নিয়ে যেন আলোচনা করতে করতে সাধু বাড়ির দিকে যাচ্ছে। রাজ আন্টিকে জিজ্ঞাসা করল, আন্টি এত মানুষ সবাই কোথায় যাচ্ছে? দাঁড়াও দেখছি, বলে আন্টি জমেলাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা সবাই কোথায় যাচ্ছ? 

জমেলা জবাবে বলল, সে কি! তোমরা এখনো জানো না। রাজ আর তানিয়াও ওদের কাছে গেল। আন্টি বললেন, কি জানবো? আয়েশা মাথা নিচু করে জবাব দিল, কাউসারের ছোট মেয়ে মর্জিনাকে ভূতে পেয়েছে। রাতে মেয়েটা নিজের ঘরেই ঘুমিয়ে ছিল কিন্তু সকালে তাকে পাওয়া গেল বট গাছের ডালে, তাইতো তাকে সাধু বাবার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, এখন বাবাই ভরসা।

কথা শেষ করে ওরা চলে গেল। 

রাজ অবাক হয়ে বললো, এই গ্রামের মানুষ এখনও এসমস্ত বিশ্বাস করে?

আন্টি রাজের দিকে তাকিয়ে জবাব দিলেন, এই গ্রামে এখনো ভূত আছে। চলো গিয়ে দেখি মেয়েটার কি হলো। আন্টি সাধু বাড়ির দিকে যেতে শুরু করলেন।

পিছু পিছু তানিয়া ও রাজ তাকে অনুসরণ করল।

 সাধু বাড়ি গিয়ে দেখল মর্জিনাকে সাধুবাবা ঝাড়ু দিয়ে মারছে আর বলছে তুই যাবি কিনা বল, তুই যাবি কি না বল,

মর্জিনা মাটিতে পড়ে থেকে কাঁদতে কাঁদতে বলছে আমার কিছু হয়নি আমি খুব ভোরে গিয়ে বট গাছের ডালে বসে ছিলাম।

সাধু ওর ডান হাত মাটির সাথে চেপে ধরল আর বলল কথা শোনা ভূত নশ তাই না? আমিও সাধু ইরিং বিরিং তিড়িং। কি করে তোকে ছাড়াতে হয় তা খুব ভালো করেই জানি। 

ঝোলার ভেতর থেকে একটা ব্লেড বের আনল। মর্জিনার হাত কাটতেই যাবে এমন সময় রাজ চিৎকার করে উঠলো, না, দাঁড়ান, কি করছেন? মেয়েটা তো মরে যাবে।

দৌড়ে গিয়ে মর্জিনাকে মাটি থেকে টেনে তুলল। সাধু রেগে গিয়ে বলল, এই ছেলে কে তুমি? জলদি করে আন্টি সাধুর কাছে গিয়ে বিনয়ের কণ্ঠে বললেন, বাবা ও আমার ভাইয়ের ছেলে। গ্রামে নতুন এসেছে এবারের মতো ক্ষমা করে দিন বাবা।

বাবা বললেন, হুম,,,,,,,,,,,,,।

রাজ রেগে গিয়ে বলল, আন্টি এটা কি বলছ? মেয়েটা নিজের মুখে বলছি যে সে 

খুব ভোরে দিয়ে গাছে উঠেছে তার পরেও এভাবে মারধরের কি আছে?

আন্টি রাজের হাত ধরে বললেন, যা বোঝনা তা নিয়ে কথা বলবে না। তার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে গেল। তানিয়াও সাথে সাথে চলে গেলো। রাজ মনে মনে খুব রেগে গেল কিন্তু কিছুই বলতে পারলোনা।

সেদিন রাতে জসিমের বাজার থেকে ফিরতে একটু রাত হল। মজাহার বাড়ি ফিরছিল মজাহার বটগাছ পেরিয়ে বেশ কিছুটা রাস্তা এগিয়ে গিয়েছে। জসিম কি যেন ভেবে বটগাছের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। মজাহার জানতোনা জসিমও তার পিছু পিছু আসছে।

মজাহার কোন একটা শব্দ পেয়ে শুনতে পাই, আর সে পিছনে তাকায়।সে বটগাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা জসিমকে দেখতে পায়। সে তাকে দেখে ভূত বলে মনে করে আর ভূত,,,, ভূত,,,, বলে চিৎকার করতে শুরু করে। এদিকে জসিম ভাবে হয়তো তার পেছনে ভূত আসছে তাই সে পিছন দিকে না তাকিয়ে সামনের দিকে দেয় দৌড়।

মজাহার ভাবে ভূত হয়তো তাকে ধরার জন্য ধেয়ে আসছে। ভয়ে সে ভূত ভূত বলতে বলতে সেখানে পড়ে যায় আর জ্ঞান হারায়। জসিম তাকে ফেলে পালিয়ে যায়।

পরদিন সকালে মজাহারকে সেখানেই পাওয়া গেল কিন্তু জীবিত নয় মৃত। সকলে বলতে শুরু করল ফরিদের ভূত তাকে মেরেছে।

পার্ট-৩

একদিন শোনা গেল মন্টু মিয়া কে ভূতে পেয়েছে। সে নাকি তার আশেপাশের সব মানুষদের গালাগালি দিচ্ছে আর জামিলকে খুঁজছে। সে নাকি জামিল কে মারবে। রাজ আর তানিয়া অন্য মানুষদের সাথে বন্ধুদের বাড়িতে গেল। গিয়ে দেখল মন্টু তার ছোট ভাই সুমন কে বলছে আমি জানি তুই জামিল। তুই আমাকে যতই বলিস না কেন যে, তুই সুমন আমি জানি তুই জামিল। জামিল তুই ঘোড়া সাজ, আমি তোর পিঠে চড়ব। পিঠে চড়ে আমি পরীর দেশে যাব।

জামিল আমাকে ধর আমি পাখি হয়ে গেছি আমি উড়ে যাচ্ছে।

কিছুক্ষণ পরে এল সাধু বাবা। তিনি মন্টু মিয়া কে দেখে সুমনকে বলল দড়ি আর লাঠি নিয়ে আসতে। সে দড়ি আর লাঠি নিয়ে এল। এরপর বললেন দড়ি দিয়ে হাত-পা বেঁধে দে। সাধুবাবার কথা মত কয়েক জন মিলে হাত পা বেঁধে দিল।হাত-পা বাঁধা হলে সাধু বাবা লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করে দিল।

রাজ দৌড়ে গিয়ে এক ধাক্কায় সাধুকে ফেলে দিলি এবং মন্টুর হাত পায়ের বাধন খুলতে শুরু করল। সবাই চেঁচিয়ে উঠলো, কী করো? কী করো? এ কী করলে? তুমি সাধু বাবার গায়ে হাত তুললে? তোমাকে ভূতে পেয়েছে নাকি?

রাজ প্রতিবাদ করে বলল, ভূতে আমাকে পাইনি, আপনাদের পেয়েছে। মন্টুমিয়ার শরীরে কোন ভূত নেই। তার মাথায় কোন সমস্যা হয়েছে। তাকে কোনো ভালো হসপিটালে নিয়ে যান আর ডাক্তার দেখান। আপনা আপনি ঠিক হয়ে যাবে।

সাধু উঠে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে মন্ত্র পাঠ করলো সুমন মিয়া সাধুর পায়ে ধরে বলল, বাবা দয়া করে আমার ভাইকে ভালো করে দিন, আমার ভাইকে ভালো করে দিন, দয়া করুন বাবা।

সাধু ওকে এক লাথি দিয়ে ফেলে দিল আর বলল, না আমি তোর ভাইয়ের কোন চিকিৎসা করবো না। এই শহরের ছেলেটাকে দিয়ে চিকিৎসা করা। মরুকগে  তোর ভাই মরুক। সুমন আবার পা জড়িয়ে ধরল আর কান্না শুরু করল।

কিছুক্ষণ কান্নার পর সাধুর মনে দয়া জাগলো তাই ওকে পায়ের কাছ থেকে উঠিয়ে বলল, কাঁদিস না রে পাগল কাঁদিস না। আমি তোদের উপর দয়া না করলে আর কে করবে। ওর হাত পা আবার শক্ত করে বেঁধে দে।

রাজ আবার কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তানিয়া ওকে সে সুযোগ দিল না, ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে বাইরে চলে এলো। বাইরে এসে ‘ছারো আমাকে’ বলে এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিলো আর বলল, এভাবে আমাকে ধরে আনলে কেন?

তানিয়া জবাবে বলল, ‘তুমি কিচ্ছু জানোনা কয়দিনের জন্য গ্রামে বেড়াতে এসেছ কয়দিন পরেই চলে যাবে মিছা মিছি ঝামেলায় জড়ানোর কি দরকার। তাছাড়া প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয় না এর আগে যারা প্রতিবাদ করেছিল তাদের লাশ পাওয়া গেছে হয় নদীর পারে নইলে বট গাছে গলায় দড়ি দেওয়া অবস্থায় অথবা হয়েছে পাগল’। একটু দম নিয়ে আবার বলল, ‘তাই আমি চাইনা এই গ্রামে বেড়াতে এসে তোমার কোন ক্ষতি হোক’। কথা শেষ করে হাঁটতে শুরু করল। রাজও ওর পিছু পিছু হাটতে হাটতে জিজ্ঞাসা করলো, ‘প্রতিবাদ করেছিল মানে? এরকম কি সবসময় হয়?’

জবাবে তানিয়া বলল, ‘হ্যাঁ। ছোট থেকেই দেখে আসছি। একবার করিম চাচা প্রতিবাদ করেছিল কিছুদিন পর তার লাশ পাওয়া গিয়েছিল নদীর পাড়ে। একবার ফরিদ কাকু প্রতিবাদ করেছিল তাকে বট গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। সকলের বিশ্বাস ফরিদকাকুর আত্মা এখনো বটগাছ রয়েছে। গফুর ভাই ও প্রতিবাদ করেছিল কিন্তু এখন পুরোপুরি পাগল।’

একটু দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করল, ‘গ্রামের মানুষের বিশ্বাস ওরা সাধুর বিরুদ্ধে কথা বলেছিল বলে সাধুবাবার ভূতেরা একাজ করেছে। এই গ্রামে যদি কারো জ্বর হলেও ভাবা হয় ভূতের আচর হয়েছে। তাই সকলে দৌড়ে যাই সাধু বাবার কাছে তাবিজ আনতে।’

সেদিন রাত থেকে রাজের খুব জ্বর হল। গ্রামের মানুষ বলতে শুরু করল সাধু বাবার অভিশাপ লেগেছে। আন্টি দৌড়ে গেল সাধু বাবার কাছে গিয়ে বলল, বাবা আমার ছেলেকে ক্ষমা করে দাও বাবা ও এখানের কিছুই জানেনা। দয়া করো বাবা দয়া করে। রাজ এখানে কিছুদিনের জন্য বেড়াতে এসেছে, ওর কিছু হয়ে গেলে ভাইয়া-ভাবীর কাছে মুখ দেখাতে পারবো না।

সাধু আন্টিকে সান্তনা দিয়ে বলল, ‘ওরে থাম, থাম। তোর ভাইয়ের ছেলের কিছুই হবেনা সে বাচ্চা ছেলে না জেনে ভুল করেছে।’ ঝোলার ভিতর থেকে একটা তাবিজ বের করে বলল, ‘এই তাবিজটি ধর, ওর গলায় বেঁধে দিস।’ চোখ বন্ধ করে আবার ধ্যানে বসল।

আন্টি তাবিজটি নিয়ে বাড়ি চলে এল। এরপর শিড়ি বেয়ে ওপরে উঠে রাজের ঘরে গেল। গিয়ে দেখল রাজ বিছানায় শুয়ে আছে আর তানিয়া চেয়ারে বসে থেকে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। ফোন রাখতেই মা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কার সাথে কথা বলছিলে?’ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তানিয়া উত্তর দিলো, ‘আব্বুর সাথে’। মা আবার প্রশ্ন করলেন, ‘কি বললে?’তানিয়া আবার উত্তর দিল, ‘বললাম যেন ডাক্তারকে বলে রাজের জন্য ঔষধ নিয়ে আসে।’ মা বললেন, ‘ওষুধ এনে আর কি হবে’?’ কি হবে মানে’? তানিয়া অবাক হল। মা হেসে জবাব দিলেন, ‘মানে বাবার কাছে গিয়েছিলাম, তিনি আমাকে একটা তাবিজ দিয়েছেন এই তাবিজ গলায় বেঁধে দিলে রাজ সুস্থ হয়ে যাবে।’ তানিয়া বিরক্তির কন্ঠে বলল, ‘আম্মু প্লিজ, ‘তাবিজে কারো জ্বর সারে না, সারতে পারে না।’ ‘তুমি চুপ করো’ তানিয়াকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলেন আর রাজের গলায় তাবিজ বাঁধতে গেলেন-

সাথে সাথে রাজ বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠল, না আন্টি প্লীজ, এই তাবিজ আমি বাঁধবোনা। এটা আমার গলায় বাঁধলে আমার জ্বর কমার পরিবর্তে আরো বেড়ে যাবে।

আন্টি হাসতে হাসতে বললেন, কী যে বলোনা। তুমি মিছামিছি সাধুবাবা কে খারাপ ভাবো কিন্তু সাধুবাবা খুব ভালো মানুষ। তিনি সবসময় আমাদের পাশে থাকেন। নাও দেখি, বলে জোর করে তার গলায় তাবিজ বেঁধে দিলেন। এরপর বিশ্রাম নিতে বলে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।

পার্ট-৪

সাধুবাবা মন্টুমিয়ার অনেক চিকিৎসা করেও তাকে সুস্থ করতে পারলেন না। তাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। কিছুদিন পর রাজও সুস্থ হয়ে গেল। সে দেখল এই গ্রামের অনেক মানুষ মানসিক ভাবে অসুস্থ।

বেশ কিছুদিন পর মন্টুমিয়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এলো।

সেদিন রাজ আর তানিয়া বড় আম গাছের নিচে বসে ছিল। এমন সময় মন্টুমিয়া সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। তানিয়া তাকে দেখে ডাকল, ‘কাকু একটু এদিকে শুনবেন’?

মন্টু মিয়া জবাব দিল, ‘হ্যাঁ মা, বল। মন্টু মিয়া কাছে গেলে তানিয়া জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি কি এখন পুরোপুরি সুস্থ’? মন্টু মিয়া জবাব দিল ‘হ্যাঁ, হাসপাতাল থেকে আসার পর থেকে সুস্থই আছি’।

এবার রাজ তাকে প্রশ্ন করল ‘কাকু আপনি যখন অসুস্থ ছিলেন তখনকার কথা কি কিছু মনে আছে’? মন্টু মিয়া হাসতে হাসতে জবাব দিল,’মনে থাকবে না কেন? আসলে আমি তো অসুস্থ ছিলাম না, কিছু পরী এসে আমাকে তাদের দেশে নিয়ে গিয়েছিল’। তানিয়া মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করল ‘কাকু পরীরা দেখতে কেমন ছিল? তারা কেমন পোশাক পড়তো?’ মন্টুমিয়া উত্তর দিল ‘তারা আমাদের মতই ছিল। আমরা যে রকম পোশাক পরি তারাও সে রকম পোশাক পড়তো, যে রকম খাবার খায় তারাও সেরকম খাবার খায়। তারা তো আমাকে আসতেই দেবে না আমি জোর করে এসেছি। ওহ আমার এখন কাজ আছে আচ্ছা পরে কথা বলব’। মন্টু মিয়া রাস্তা দিয়ে হেটে চলে গেল। মন্টু মিয়া চলে গেলে তানিয়া রাজকে জিজ্ঞাসা করল, ‘আচ্ছা তোমার কি মনে হয় উনি সত্যি কি পরীর দেশে গিয়েছিলেন’?

রাজ নিজের মাথা চুলকিয়ে জবাব দিল, ‘তানিয়া তুমি যদি একটু ভেবে দেখো তাহলে নিজেই উত্তর পেয়ে যাবে’। তানিয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রাজের দিকে তাকালো। রাজ তার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে নিজেই উত্তর দিয়ে দিল, মন্টুমিয়া ভুত-প্রেত পরী সব কিছুই বিশ্বাস করে। তাই উনি যখন অসুস্থ ছিলেন তখন উনার সাধারণ মানুষেরই পরী বলে মনে হয়েছিল।

রাজের কথা শেষ হতেই লাবুকে দেখল খুব ছটফট করতে করতে পশ্চিম দিকে যাচ্ছে।সে পড়ে যেতে লাগলে রাজ দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরল আর জিজ্ঞাসা করল, কি হয়েছে আপনার? আপনি এমন করছেন?

কিন্তু লাবু কোন উত্তর দিল না সে তাকে ঠেলে সরিয়ে দিলো এবং সাধু বাড়ির দিকে চলে গেল। তানিয়ার কাছে জানতে চাইল, ‘তিনি এরকম করছিলেন কেন’? তানিয়া উত্তর দিল ‘এটাই এই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের রোগ। তারা এভাবে ছটফট করতে করতে সাধু বাবার কাছে যায়। সাধুবাবা একটা ওষুধ দিতেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে। রাজ আবার প্রশ্ন করল, ‘মানুষ এত তাড়াতাড়ি কি করে সুস্থ হতে পারে’?

তানিয়া উত্তর দিল,’সেটা আমারও জানা নেই কিন্তু আমার মনে হয় সাধু বাবার গোপন কোনো রহস্য রয়েছে।’ ‘রহস্য একটা তো রয়েছেই বটে’, রাজ গভীর চিন্তায় ডুব দিল।

একটু পরে দেখা গেল লাবু সুস্থ হয়ে ফিরে আসছে। রাজ আর তানিয়া তার কাছে গেল এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলো আপনি এত তাড়াতাড়ি সুস্থ হলেন কি করে? বাবা কি আপনাকে কোন ঔষধ দিয়েছেন? লাবু হো হো শব্দে হেসে উঠল। হাসি থামিয়ে উত্তর দিল, ওষুধ ছাড়া কি অসুখ শারে। একটা ইনজেকশন এর জন্য বাবাকে ১০০০ টাকা দিয়েছি। হো হো হো,,,,,,,। হাসতে হাসতে চলে গেল।

তানিয়া খুব অবাক হল। সাধু বাবার কাছে আবার ইনজেকশন?যে কিনা সকল রোগের জন্য তাবিজ দেয়, সে আবার ইনজেকশন দিচ্ছে।

রাজ খুব উত্তেজিত হয়ে বলল, আমি বুঝতে পেরেছি আসল ঘটনাটা কী? তানিয়াও উত্তেজিত হয়ে বলল, কি বুঝতে পেরেছ? রাজ জবাব দিল, সাধু লাবুকে কোন ঔষধ দেয় নি বরং ওষুধের নামে মাদক পুশ করেছে?

তানিয়া চমকে গেল,’কি! মাদক!’ রাজ বলল, ‘হ্যাঁ মাদক। সাধু মানুষের কাছে সাধু সেজে ওষুধের নামে মাদকের ব্যবসা করে। আর সাধারণ মানুষ সেটা বুঝতেও পারে না। কেননা এই গ্রামের মানুষ অন্ধবিশ্বাসী। তারা কুসংস্কার বিশ্বাস করে।’ ডান হাত মুঠো করে বাম হাতের তালুতে ঘুষি মারল, ‘ ইস, একবার যদি ব্যাটাকে হাতে নাতে ধরতে পারতাম’।দুজনেই কিছুক্ষণের জন্য নীরব হয়ে গেল।

একটু পরে তানিয়া বলল, আজ রাতে যেন আবার জানালা খুলে বসে থেকো না। তুমিতো আবার ঘুম না এলে জানালা খুলে বসে থাকো।

রাজ প্রশ্ন করল, ‘জানালা খুলবো না? কিন্তু কেন?

তানিয়া উত্তর দিল, ‘কেননা আজকে পূর্ণিমা। সকলের বিশ্বাস প্রতি অমাবস্যা আর পূর্ণিমার রাতে ভূতেরা ঘুরে বেড়ায় কখনো হাসে কখনও কাঁদে আবার কেউ কেউ নাকি ওদের কথাও শুনতে পাই’।রাজ খুব উত্তেজিত হয়ে বলল, কি বলছ তানিয়া? তানিয়া বলল, হ্যাঁ আমি ঠিকই বলছি। যদিও জানি না এর সত্যতা কতটুকু।

রাজ পুরনো স্মৃতি মনে করে বলল, ‘আমার মনে আছে যে আমি যেদিন এখানে এসেছিলাম সেদিন অমাবস্যা ছিল। সেদিন মাঝরাতে রাস্তায় আমি কিছু মানুষের কথা শুনেছিলাম।’

কি বলছ রাজ, তানিয়া খুব উত্তেজিত হয়ে উঠল।

রাজ আনন্দের সাথে লাফিয়ে উঠে বলল,হ্যাঁ আমি সত্যি শুনেছিলাম। আমি হয়তো ভন্ড সাধুর মুখোশ খোলার একটা রাস্তা পেয়েছি।

তানিয়া খুব আগ্রহ সহকারে বলল, কি রাস্তা পেয়েছো?

এবার রাজ ওকে বুঝিয়ে বলতে শুরু করল, সকলে বলে না অমাবস্যা আর পূর্ণিমার রাতে নাকি মাঝরাতে ভূতেরা ঘুরে বেড়ায়। আসলে এগুলো কিছুই না সাধু বাবার কাছে সেদিন বাইরে থেকে মানুষ আসে বিভিন্ন ধরনের নেশা ও মাদক নিয়ে। আর সাধু গ্রামের মানুষদের ভূতের ভয় দেখিয়ে সবাইকে ঘরে থাকতে বাধ্য করে যেন তাদের কেউ দেখে না ফেলে।’ রাজ একটা দীর্ঘঃশ্বাস ছাড়ল আর বলল, আজ পূর্ণিমা, মানে আজ রাতে ওরা আসবে। কিন্তু আমরা মাত্র দুজন। দুজনে আমরা ওদের কিছুই করতে পারব না। যদি আমাদের সাথে আর কয়েকজনকে পেতাম তাহলে ভন্ড সাধুর মুখোশ আজকেই খুলতে পারতাম।

তানিয়া আনন্দে লাফিয়ে উঠল, আছে, আমাদের সাথে এরকম মানুষ আছে।

রাজ উত্তেজিত হয়ে বলল কোথায় থাকে তারা?

তানিয়া জবাব দিল, মধ্যপাড়ায়। মধ্যপাড়ার তিন ভাই মকু, ছকু,তকু আর ওদের বন্ধুরা। ওরা কেউ ভন্ড সাধুর ভন্ডামী বিশ্বাস করে না। রাজ আদেশ দিল,  তাহলে আজ সন্ধ্যায় সকলে দরজায় খিল দেবার আগে  এই আম বাগানে সবাইকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করো। তানিয়া রাজি হল, ঠিক আছে তাহলে আমি এক্ষুনি মধ্যপাড়ায় যাচ্ছি আর সবাইকে সন্ধ্যার সময় বাগানের দিকে আসতে বলছি। তানিয়া সবাইকে ডাকতে মধ্যপাড়ায় চলে গেলো।

শেষ পর্ব

সন্ধ্যার সময় সবাই বাগানে উপস্থিত হল। এরপর প্ল্যান করল, রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়বে তখন তারা সবাই এখানে এসে উপস্থিত হবে আর রাস্তার পাশে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পড়বে। রাতে যখন ভূত বাবাজীরা আসবে তখন তারা পিছন পিছন তাদের অনুসরণ করবে। প্ল্যান শেষ হলে সবাই যে যার বাড়িতে ফিরে গেল।

রাজ তানিয়া বাড়িতে প্রবেশ করেই খাবার খেতে চাইলো। আন্টি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল এত তাড়াতাড়ি খাবার খেতে চাচ্ছ? অন্যদিন তো খাবার খেতেই চাও না। জোর করে খাবার খাওয়াতে হয়। রাজ জবাব দিল, আজকে একটু তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বো। আন্টি এতে আরো অবাক হল। অন্যদিন রাতে রাতে রাজকে ঘুমোতে পাঠানোই যায় না অথচ আজ সন্ধ্যা সাতটার সময় খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বে বলছে? আন্টি অবাক হলেও খুশিও হয়ে গেলেন তিনি। তাড়াতাড়ি করে তাদের খেতে দিলেন। তারা রাতের খাবার খেয়ে নিল আর ঘুমোতে চলে গেল। 

রাতে সকলে ঘুমিয়ে পড়েছে এমন সময় রাজের দরজায় টোকা পড়লো। রাজ  দরজা খুলে দেখল তানিয়া দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। তানিয়া বললো সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে এবার চলো বেরিয়ে পড়ি।

সিঁড়ি দিয়ে পা টিপে নেমে এলো। কোন শব্দ যেন না হয় তাই জুতা হাতে নিয়ে ছিল। যেন কোন শব্দ না হয়। বাইরে বেরিয়ে এসে পায়ে জুতা পরে নিল গেট বন্ধ করার সামান্য শব্দ হলো এতে তানিয়া ভয় পেয়ে গেল আবার কেউ জেগে না যায়। কিন্তু এমনটা হলো না।

তারা তাড়াতাড়ি করে বাগানে পৌঁছলো সেখানে গিয়ে দেখল মকু ছকু তকু আর বাকি সকলেই তাদের আগেই পৌঁছে গেছে। তারা দড়ি আর লাঠি হাতে নিয়ে এসেছে। তানিয়া ওদের জিজ্ঞাসা করল তোমরা দড়ি দিয়ে কি করবে? তকু মুচকি হেসে জবাব দিল ভূত বাবাজীদের  দড়ি দিয়ে বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটাবো। সবাই হাসতে শুরু করল। কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে আগের প্ল্যানটা আবার ঝালিয়ে নিল। এরপর তারা রাস্তার দিকে যেতে শুরু করল, রাজ যে রাস্তা দিয়ে ভূত বাবাজীরা সেদিন যেতে দেখেছিল। তারা একটি ঝোপ দেখে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে পরল আর তাদের আসার জন্য অপেক্ষা করতে শুরু করল।

কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল তিনজন লোক রাস্তা দিয়ে হেঁটে সাধু বাড়ির দিকে যাচ্ছে। আর খুব জোরে জোরে হাসছে তানিয়া বুঝতে পারলো এভাবে ওরা অন্যান্যদিন যাওয়ার সময় হাসে আর সবাই মনে করে ভূতেরা হাসছে, কোন কোন দিন হয়তো কান্না করে তখন সবাই মনে করে ভূতেরা কান্না করছে আবার কোনদিন স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলতে বলতে যায় তখন সবাই মনে করে ভূতেরা কথা বলছে। তাদের হাতে রয়েছে তিনটি ব্যাগ।

সাহসী ছেলের দল ওদের অনুসরণ করতে শুরু করলো। তারা তাদের থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে চলছিল কেননা আজ পূর্ণিমা রাত। পূর্ণিমার কারণে সবকিছু  দিনের আলোর মত পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। তাই তারা সাহসী ছেলেদের দেখে ফেলতে পারে। তারা যাচ্ছিল আর এদিক সেদিক বারবার তাকাচ্ছিল যেন কেউ আবার তাদেরকে অনুসরণ না করে। সাহসী ছেলের দল মাথা নিচু করে ধীরে ধীরে ওদেরকে অনুসরণ করছে যেন ওরা বুঝতে না পারে।

লোকগুলো হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লো কিছু একটা শব্দ পেয়ে এবার পিছন দিকে ফিরে তাকাল। সবাই ভয় পেয়ে গেল কিন্তু পাশেই একটা মোটা গাছ দেখতে পেল।তারা দ্রুত গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়লো। মকু বিড়বিড় করে বলল, ভাগ্যিস এই মোটা গাছটা এখানে ছিল।

লোকগুলো চারি দিকটা ভালো করে দেখে নিল কিন্তু কিছুই দেখতে পেলনা তাই  আবার হাঁটতে শুরু করল। রাজেরাও তাদের আবার অনুসরণ করতে শুরু করল।

কিছুক্ষণের মধ্যে তারা সাধু বাড়ির সামনে পৌঁছে গেল। তারা কুঁড়েঘরের সামনে গিয়ে দরজায় টোকা দিল। সাধু যেন এদেরই অপেক্ষায় দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল। দরজায় টোকা পড়তেই দরজা খুলে দিল এবং তাদের স্বাগতম জানালো। সেই সাথে বলল,রাস্তায় কোন সমস্যা হয়নি তো? লোকগুলো হেসে জবাব দিল, আমাদের সমস্যা হবার কথা নাকি? হা হা হা,,,,,, তুমি যে অবস্থা করে রেখেছ গ্রামের তাতে কেউ সন্ধার পরে বাড়ির বাইরে আসার সাহস দেখাবে না।

আরেকজন হো হো করে হেসে দিল যেন গ্রামের মানুষকে একেবারে বোকা বানিয়ে দিয়েছে এরপর চারজনে  হাসতে হাসতে কুঁড়েঘরের ভেতরে চলে গেল।

সাহসী ছেলের দল কুঁড়েঘরের সামনে গেল। তারা দেখল দরজা খোলাই আছে। তারা ভেতরে প্রবেশ করলো। ভিতরে গিয়ে দেখল সাধু একটা ব্যাগ ভর্তি টাকা ওদের দিকে এগিয়ে দিচ্ছে। ছেলেদের দেখে ভয়ে ভয়ে বললাম, তোমরা এত রাতে? এখানে কেন এসেছো? রাজ জবাব দিল, তোমার ভালো মানুষের মুখোশ খুলতে এসেছি। সাহসী ছেলের দল তাদের ওপর আক্রমণ করল। কিল, ঘুষি, লাথি মারতে মারতে দড়ির সাথে বেঁধে ফেলল। চারজনকে দড়ি দিয়ে বেঁধে টানতে টানতে বট গাছের কাছে নিয়ে গেল।

এরপর বট গাছের সাথে বেঁধে সাধু আর তার তিনজন সহযোগীকে মারতে শুরু করল। তারা সারারাত ধরে ওদের ইচ্ছেমতো পিটালো আর তাদের মুখ থেকে সমস্ত কথা বের করে নিল।

ভোর হতেই গ্রামের মানুষ বটগাছের নিচে গিয়ে জমা হল। তানিয়া তাদের সমস্ত বিষয় খুলে বলল। রাজ ব্যাগ খুলে নেশা দ্রব্যগুলো এবং টাকা দেখালো। এই নেশা দ্রব্য গুলোর মধ্যে এমন একটি নেশাদ্রব্য আছে যেটা অল্প পরিমাণে খেলে মানুষ কিছুদিনের জন্য পাগল হয়ে যায় আর বেশি মাত্রায় খেলে চিরদিনের জন্য পাগল হয়ে যায়। এরপর গ্রামের মানুষ পুলিশে খবর দিলে সাধু আর তার সহযোগীরা পুলিশের কাছে করিম আর ফরিদ কে হত্যা করার কথা স্বীকার করেনিল। 

পুলিশ ওদের ধরে থানায় নিয়ে গেল অবশেষে গ্রামটি ভন্ড সাধুর হাত থেকে রক্ষা পেল।

সমাপ্ত

আপনার মতামত, পরামর্শ, অভিযোগ অথবা কোন জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন।

রোমান্টিক লাভ স্টোরি পড়তে ক্লিক করুন [ আমার ডেভিল বস ]

Leave a Comment