স্বাধীনতার সূর্য

আমার ওয়েবসাইটে আসার জন্য ধন্যবাদ

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গল্প

সূর্য তখন মধ্যগগনে। আকাশ থেকে যেন আগুনের বৃষ্টি ঝরছে। এমন সময় দুটি কৈই আর একটি রুই মাছ আর শীপ বড়শি হাতে করে বাড়ি ফিরছিল জনি আর হামীম। তারা প্রায় নদীতে মাছ ধরতে যায়। মাছ ধরা ওদের একটা নেশা।

পথে দেখল মজুমদার বাড়ির আঙিনায় বেশ ভিড়। কিছু মানুষ খুব মনোযোগ দিয়ে কি যেন শুনছে।

হামীমঃ ওখানে এত ভিড় কেন রে জনি?

জনিঃ আমি কি করে জানবো আমি তো তোর সাথে আছি।

হামীমঃ চলতো গিয়ে দেখি।

জনিঃ হ্যাঁ তাই চল।

সেখানে গিয়ে দেখল সবাই রেডিওতে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা শুনছে।

মজুমদার মন্ডল বললেন, দেশে এবার যুদ্ধ লেগেই গেল।

হ্যাঁ মজুমদার চাচা মানুষগুলোকে এখন কোথায় যে যাবে বাচ্চাগুলো তো এখন না খেয়ে মরবে, এক অর্ধ বয়স্ক লোক বলল।

ওদের কথোপকথনের মাঝে হামীম আর জনি সেখান চলে আসে।

– ইশ! যদি আমরাও যুদ্ধে যেতে পারতাম রে হামীম।

– ঠিক বলেছিস। যদি যেতে পারতাম তাহলে এই দেশের মাটি থেকে ওদের নাম নিশানা মুছে দিতাম।

কিছুদিন পর ওরা আবার নদীতে মাছ ধরতে গেল বৃষ্টির কারণে নদীতে এখন অনেক পানি 

একটি মাছ জনির বড়শিতে ঠোক দিল। এমন সময় সে দেখতে পাই ওপার থেকে নৌকায় করে তারা যেন আসছে।

-ওদের কেমন একটা মনে হচ্ছে। কেমন সুট বুট পড়ে আছে দেখ।

– আমারও তো কেমন একটা মনে হচ্ছে। আচ্ছা জনি ওরা আমাদের শত্রু পক্ষ নই তো।

– আরে হ্যাঁ তাইতো মনে হচ্ছে। শুনেছি কাল নদীর ওপারের গ্রামে আক্রমণ করেছিল নাকি। আজ হয়তো আমাদের গ্রামে আক্রমন করতে আসছে।

– তাই নাকি?

– হ্যাঁ।

– তাহলে তো ওরা পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে  পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলবে।

– তাহলে চল ওদের ডুবিয়ে দিই।

– কি যে বলিস হামীম। ওরা অনেকে আছে আর আমরা মাত্র দু’জন।

 – তাতে কি হয়েছে ওরা কেউ সাঁতার জানে নাকি? শুধু নৌকা ডুবিয়ে দিলেই ব্যাস।

– তাই নাকি? তাহলে চল যায়। 

যে বলা সে কাজ। দুই বন্ধু পানিতে নেমে পড়ল।

নদীর ধার থেকেই তারা ডুব সাঁতার দিয়ে নদীর মাঝখানে ভেসে যেতে শুরু করল। কিছুক্ষণ পর ভেসে উঠলো ঠিক নৌকার পাশে। তারপর নৌকা টেনে ধরলো।

 রাজাকার গুলো বলতে শুরু করল, তুম লোগ কিয়া কাররাহিহো? ছোড় দো হামে। এ্যাই লোগ মুক্তি হ্যায়। হাম নেহি ছোড়ংগি তুম লোগকো, বলতে বলতে ওদের দিকে বন্দুক তাক করলো কিন্তু গুলি করতে পারল না। তার আগেই নৌকা ডুবে গেল।

তারা পানিতে ভেসে থাকার অনেক চেষ্টা করল। কিন্তু পারল না। রাজাকার গুলোর মধ্যে একজন সাঁতার জানতো। তাই সে সাঁতার কেটে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু নৌকার মাঝি তাকে সে সুযোগ দিল না। তার মাথা চেপে ধরল পানিতে ।  কিছুক্ষণ ছটফট করে সে  সেখানেই মারা গেল।

নৌকার মাঝি আর দুই বন্ধু মিলে ৫ জন পাক সৈনিককে নদীতে ডুবিয়ে মারল। আর তাদের বন্দুক, গুলি নিয়ে নদীর পারে উঠে এলো।

মাঝি তনজেব বলল, আমার ভাই তোফায়েল একজন মুক্তিযোদ্ধা আর আমিও। আমি বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে ওদেরকে জানাই। তোমাদের মাঝে সাহস আর শক্তি দুটোই আছে। তোমরা কি আমাদের সাথে মুক্তিবাহিনীতে  যোগ দান করবে?

তনজেবের এই প্রস্তাবে দুই বন্ধু হতভম্ব হয়ে একবার একে অপরের দিকে তাকাল তারপর উচ্চস্বরে বলে উঠল, হ্যাঁ যাবো।

এরপর তারা মুক্তি বাহিনীর সাথে যোগ দিল আর দেশের হয়ে যুদ্ধ করতে শুরু করল। নয় মাস যুদ্ধ চলার পর অবশেষে দেশ স্বাধীন হলো জন্ম হলো বাংলাদেশের। জন্ম নিল এক নতুন সূর্য। স্বাধীনতার সূর্য। 

সমাপ্ত

আপনার মতামত, পরামর্শ, অভিযোগ অথবা কোন জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর সমূহ, বাংলা আমার মা

Leave a Comment