ব্যাক টু ২০১৫(পার্ট- ১)

আমার ওয়েবসাইটে আসার জন্য ধন্যবাদ

time travel story

আমাকে এভাবে একা রেখে চলে গেলে? আমি থাকবো কিভাবে? আমার কথা একবারও ভাবলে না? ওই মহিলা যে, তোমাকে কখনই ভালোবাসেনি সেই তোমার কাছে সবকিছু? আমি কি তোমার কেউ না? তুমি ওর জন্য আত্মহত্যা করে নিলে। একবার ভাবলেও না তুমি মরে গেলে আমার কী হবে। মৃত বাবার আবিষ্কৃত টাইম মেশিন এর সামনে বসে এগুলো ভাবছিল রাজ। এরই মাঝে অন্ধকার রুমে লাইট জ্বলে উঠল। রাজ চমকে উঠে পিছনে তাকালো। দেখতে পেল তার বাবার কলেজের বান্ধবী তমা এসেছে। সে একজন প্রাইমারী স্কুল শিক্ষীকা। তার বন্ধু ফারাজের মৃত্যুর কারনে তার অসহায় ছেলেকে দেখার জন্য প্রতিদিন স্কুল শেষে এখানে আসে। রাজ শুধু তার বন্ধুর ছেলে তাই নয়, তার ছাত্রও। রাজ ছোট বেলায় তার প্রাইমারী স্কুলে পড়াশোনা করত।

রাজঃ ওহ আন্টি! তুমি এখনো বাসায় যাও নি?

তমাঃ তোমাকে না খাইয়ে রেখে যায় কি করে? তুমি খেয়ে নিলে আমি চলে যাব? টেবিলে খাবার দিয়েছি, খাবে চল।

রাজঃ আমার খেতে ইচ্ছে করছে না আন্টি। অনেক রাত হয়ে গেছে তুমি চলে যাও। আমি কি তোমায় এগিয়ে দিয়ে আসব?

তমাঃ প্রয়োজন নেই, আমি একাই যেতে পারব। (কাছে এগিয়ে আসল) বাবার জন্য মন খারাপ করে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিলে হবে? পৃথিবীতে কেউ চিরদিন বেঁচে থাকতে আসেনি। আজ তোমার বাবা মারা গেছে, কাল আমি মারা যাবো, একদিন তুমিও।

রাজঃ পৃথিবীতে কেউ অমর নয় কিন্তু আমার আব্বুর মৃত্যু কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়। তাকে হত্যা করা হয়েছে। আব্বু যদি স্বাভাবিক ভাবে মারা যেত তাহলে আমার এত কষ্ট হতো না। কিন্তু সেটা হয়নি আন্টি।

তমাঃ ফারাজ তো আত্মহত্যা করেছে তুমি হত্যা কেন বলছো।

রাজ উঠে দাড়িয়ে চোখের পানি মুছল এরপর বলল,

আমার আব্বুকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা হয়েছে। অপমান, অবহেলা আর বেইমানীর মাধ্যমে। ওই মহিলা দিনের পর দিন আমার আব্বুকে অবহেলা করেছে, টর্চার করেছে আর শেষ পর্যন্ত বেঈমানি করেছে। আব্বু নয় ওর মৃত্যু উচিত ছিল।

তমাঃ ছি রাজ, এগুলো বলতে নেই। তুমি ছেলে হয়ে কি করে নিজের মায়ের মৃত্যু কামনা করতে পারো?

রাজ পাগলের মত হাসতে শুরু করল। আর বলল,

কি? মা—– হা হা হা মা। ভাল বলেছ আন্টি মা–। ওর আমার মা হবার কোন যোগ্যতা নেই। আমার মা বলে কেউ  কোন দিন ছিলও না। সে শুধু আমাকে জন্ম দেয়া ছাড়া কিছুই করে নী। আমাকে খাওয়ানো, গোসল করানো, স্কুলের জন্য রেডী করে দেয়া, স্কুলে নিয়ে যাওয়া, স্কুল শেষে আবার বাড়ি নিয়ে আসা এমনকি রাতে ঘুম পাড়ানোর কাজ টাও আব্বুই করত। আমার জীবনে ওই মহিলার কোন ভূমিকা নেই। সে কেবল নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে। সে কোনদিন না আমার আব্বুকে ভালোবেসেছে আর না আমাকে। সে ততদিন আমার আব্বুকে ভালোবেসেছে যতদিন আমার আব্বুর সম্পত্তি আমার আব্বুর নামেই ছিল। যেদিন আমার সহজ সরল আব্বুকে ভুলিয়ে তার সমস্ত সম্পত্তি নিজের নামে করে নিল সেদিন থেকে তার আসল রূপ দেখানো শুরু হল। আব্বু ভেবেছিল সবকিছু তাকে দিয়ে দিলে হয়ত সে আমাদের ভালোবাসতে শুরু করবে। তাই তাকে  সমস্ত সম্পত্তি উইল করে দিল শুধু এই বাড়িটা ছাড়া।

তমা এই ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানত না। এগুলো শুনে তার ফারাজের জন্য অনেক খারাপ লাগতে শুরু হল।

রাজ জানালার কাছে গিয়ে দাড়াল এরপর আবার বলতে শুরু করল,

আব্বু সমস্ত কিছু মেনে নিয়েছিল। তিনি নিজের কষ্ট ভুলে থাকার জন্য কাজের মধ্যে ডুবে থাকতেন কিন্তু শেষে সেটা যেটা করলো সেটা মেনে নিতে পারল না। আব্বুকে ছেড়ে অন্য একজনের সাথে সম্পর্ক শুরু করলো। এমনকি তার সাথে থাকতে শুরু করলো।

তমাঃ যা হবার তা তো হয়েই গেছে এগুলো ভেবে কষ্ট পেওনা। সামনে তোমার সারাটা জীবন পড়ে আছে তোমার বয়স মাত্র ২২ বছর। এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে না শক্ত হতে হবে তোমায়।

রাজঃ আমার এই জীবনে বাঁচতে ইচ্ছে হচ্ছে না আন্টি। আজ তিন দিন হল আব্বু মারা গেছে কিন্তু আমার মা এখনো আসেনি। তার একবার মনে হয়নি যে, তার ছেলে এখন কেমন আছে।

তমাঃ আমি আছি তো আব্বু তোমার সাথে। আমি তো তোমার মায়ের মতোই।

রাজঃ মায়ের মত কিন্তু মা তো না। আচ্ছা আন্টি তুমি আমার মা কেন হলে না? তুমি আমার মা হলে এত কিছু হত না আর আমার আব্বু বেঁচে থাকতো।

তমাঃ এখন তো আর কোন কিছুই সম্ভব না। তোমার বাবা আর আমি একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে একসাথে পড়াশোনা করেছি। তেমন ভাবে পরিচিতও  ছিলাম না। সে ছিল ক্লাসের ফার্স্ট বয় আর আমি ক্লাসের লাস্ট গার্ল। কারো সাথে তেমন কথা বলত না বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকতো আর আমি বইয়ের থেকে পালিয়ে বেড়াতাম আর তোমার বাবাকে এড়িয়ে চলতাম।

রাজঃ তুমি যদি ওই সময়ে আব্বুকে এড়িয়ে না চলতে আর আমার আব্বুকে বিয়ে করে নিতে তাহলে কত ভালই না হতো।

তমা মুচকি হেসে বলল, তাই না।

রাজ খুশি হয়ে বলল, হ্যাঁ আন্টি। তারপর কি হল বল।

তমা রাজের কাছে এগিয়ে গেল, তারপর ২০১৫ সালে ইন্টার পাশ করার পর তোমার বাবা রাজশাহী ইউনিভার্সিটি তে পদার্থ বিভাগে চান্স পেয়ে গেল আর আমি কোথাও চান্স না পেয়ে ডিগ্রী নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলাম। এরপর পড়াশোনা শেষ করে আমি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা হয়ে গেলাম। এরপর এর ঘটনা তুমি জানো। একদিন তোমার বাবা তোমাকে নিয়ে এলো আমার স্কুলে ভর্তি করার জন্য। সেখানে নতুন করে আবার পরিচয় কথাই কথাই জানতে পারি সে ভার্সিটিতে যাওয়ার পর তার এক ক্লাসমেট এর সাথে রিলেশনে যায় আর স্টুডেন্ট থাকাকালীন সময়ে বিয়ে করে নেয়।

রাজ অভিযোগের সুরে বলল, তখন তুমি কেন আব্বুকে প্রপোজ করলে না আন্টি? তখনও তো প্রপোজ করতে পারতে।

তমা মুচকি হেসে জবাব ‍দিল, কি যে বলো, তোমার বাবা তখন বিবাহিত ছিল আর তোমার জন্ম হয়ে গিয়েছিলো। আমি কি করে তাকে প্রোপোজ করতে পারতাম। তাছাড়া তোমার বাবাকে নিয়ে এরকম কিছু কখনোই ভাবিনি।। আমার অন্যান্য ক্লাশমেটদের সাথে যেমন সম্পর্ক তোমার বাবার সাথে ঠিক তেমনই সম্পর্ক। আমি তো ভালোবাসি তোমাকে, আমার মানিক।

তমার মুখে মানিক কথাটি শুনে রাজ খুব খুশি হয়ে গেল আর আন্টিকে জড়িয়ে ধরল আর বলল, এই কারণেই বললাম তুমি যদি আমার মা হতে তাহলে কতই না ভালো হতো।

তমা রাজের মাথায়  আদর করে হাত বুলিয়ে দিল আর বলল, আমি বিয়ে করিনি আর আমার কোন সন্তান নেই তাই আমি তোমার মা হয়েই থাকতে চাই। তুমি আমাকে তোমার নিজের মা ভাবতে পারো।

রাজ তমাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাড়াল, আমি শুধু আমার মাকে নয় আমার বাবা কেউ চাই।

তমা এই কথার মানে বুঝতে পারল না তাই বলল, মানে? কি বলতে চাচ্ছ তুমি

রাজ  টাইম মেশিনের সামনে দাঁড়াল। তমা বুঝতে পারল রাজ ঠিক কি করতে চাচ্ছে। সে খুব ভয় পেয়ে গেল। বাবাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে গিয়ে তার নিজের না ক্ষতি হয়ে যায়। কেননা মেশনের পরীক্ষা করা এখনও বাকি আছে। তাই সে বলল, না রাজ, তোমার এটা করা উচিত হবে না। এই টাইম মেশিন টা ঠিক ভাবে কাজ করছে কিনা সেটা এখনো পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। পরীক্ষা করার আগেই তোমার বাবা আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে আর তুমি তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলে।

রাজঃ আমি যদি এখন এই মেশিন দিয়ে অতীতে যেতে পারি তাহলে পরীক্ষা করা হয়ে যাবে আর আমার অতীতে যাওয়াও হয়ে যাবে।

তমাঃ না তুমি এটা কর না। ফারাজের শেষ ইচ্ছা ছিল তুমি এই মেশিনটা ধ্বংস করে দেবে।

রাজঃ আমার আব্বুর শেষ ইচ্ছা বলে কোন ইচ্ছা নেই। আমি অতীতে গিয়ে তার অতীত পরিবর্তন করে দিব আমার মা পরিবর্তন করে দিব তাহলে আব্বু আবার বেঁচে যাবে।

রাজ টাইম মেশিন এর দিকে যেতে শুরু করল। তমা চিৎকার করে উঠল, না রাজ এটা কর না ফিরে এস। তুমি যদি তোমার মা পরিবর্তন করে দাও তাহলে তোমা নিজে অস্তিত্ব হুমকিতে পড়বে। তোমার অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যেতে পারে।

রাজ দাঁড়ায় মুচকি হাসে, আমার  অস্তিত্ব যদি না থাকে তাহলে আমার কষ্টও থাকবে না।

সে একটা রাউন্ড শেপ এর উপর গিয়ে দাঁড়ালো নিচ থেকে একটা রাউন্ড শেপ এর কাঁচের বাক্স উঠে এসে তাকে ঘিরে ধরল। তার সামনে দুটো বোতাম চলে এল একটি সবুজ আর একটি হলুদ। সে প্রথমে হলুদ বোতামে চাপ দিলো তার সামনে টাইমটেবিল চলে এলো সেখানে এসে ২০১৫ সাল সিলেক্ট করে দিল। এরপর সবুজ বোতামে চাপ দিলে পুরো বক্সটা সাদা আলোতে ভর্তি হয়ে গেল। তমা বাইরে থেকে চিৎকার করে রাজকে আটকানোর চেষ্টা করল।

বিদ্যুৎ চমকানোর মতো একটা আলো এসে কাঁচের বক্সে পড়ল আর নিভে গেল। সেই সাথে রাজও হারিয়ে গেল।

রোমান্টিক গল্প আমার ডেভিল বস (পার্ট ১) পড়তে ক্লিক করুন।

আপনার মতামত, পরামর্শ, অভিযোগ অথবা কোন জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন।

Leave a Comment